• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন

কুমারখালীতে ২ হাজার জনের টাকা নিয়ে লাপাত্তা এমটিএফই

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪০ Time View
Update : বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

বিদেশ থেকে পরিচালিত এমটিএফই অ্যাপে প্রায় শতকোটি টাকা খোয়ালেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার প্রায় দুই হাজার মানুষ।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। যাদের অধিকাংশই বসবাস করেন পৌরসভার মধ্যে। বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ায় আশায় কুমারখালীসহ কুষ্টিয়া জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার জন প্রায় আট হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিলেন এমটিএফই অ্যাপসে।

গত শুক্রবার থেকে অ্যাপসটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করত। যা দেশের আইনে অবৈধ। জানা গেছে, কুমারখালীতে এমটিএফইর মূলহোতা পৌরসভার বাটিকামারা মধ্যপাড়ার মরহুম মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো: মিজানুর রহমান। তিনি ফেমাস ফুলকুঁড়ি বিদ্যালয়ের পরিচালক। আর তার প্রধান সহকারী ছিলেন পৌরসভার ঝাউতলা এলাকার মরহুম তোফাজ্জেলের ছেলে মো: মাসুম আলী। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল ছিলেন। চাকুরি করতেন ঢাকা হেড কোয়াটারের আইটি সেক্টরে। সম্প্রতি তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে এমটিএফইসহ বেশকিছু অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন সিঙ্গার প্লাজার দোতালায় অফিস করে প্রায় দেড় বছর ধরে এ ব্যবসা পরিচালনা করেন। মাসুম ও মিজানের মাধ্যমে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছে। প্রত্যেকে আট হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেন।

আরো জানা গেছে, কারো মাধ্যমে ১০০ জন বা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে কোম্পানি তাকে কান্ট্রি অফ অপারেশন সার্ভিস (সিইও) পদমর্যাদা দেয়। মিজানুর কুষ্টিয়ার এমটিএফইর প্রধান সিইও পদে ছিলেন। তার পরের স্থান মাসুম আলীর। মাসুমের মা রেখা খাতুনও আছে সিইও পদে। গত ১১ আগস্ট মিজানুর ও মাসুম সৌদি আরবে ওমরা হজে গিয়েছেন। এরপর থেকেই অ্যাপসটিতে নানা সমস্যা ও কমিশন কমে যায়। আর গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) থেকে অ্যাপস বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ঝাউতোলার সান্টুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুস সামাদ জানান, তিনি জানুয়ারি মাসে মাসুমের মাধ্যমে ৯০০ ডলার (প্রায় এক লাখ চার হাজার টাকা) বিনিয়োগ করেন। প্রথমদিকে ভালোই লাভ হতো। মাসখানেক ধরে অ্যাপসে নানা জটিলতা দেখা যায়। লাভও কমে যায়। গত শুক্রবার তার এক হাজার ৪০০ ডলার নিয়ে কোম্পানি হারিয়ে গেছে। তার ভাষ্য, জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার জন বিনিয়োগ করেছিলেন।

হলবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মাসখানেক আগে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এ পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার ২০০টাকা উত্তোলন করেছেন। হঠাৎ অ্যাপসটি অচল হয়ে গেছে। তার ভাষ্য, কুমারখালী থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষের শত কোটি টাকা নিয়ে গেছে কোম্পানিটি।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় সিইও মাসুম আলির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মাসুমের ঘরে এমটিএফইর বিভিন্ন জনের হিসাবের খাতা ও ফাইলপত্র। সৌদিআরবে ওমরা হজ্জে গেছেন মাসুম আলী।

এ সময় তার মা রেখা খাতুন বলেন, মাসুম পুলিশের চাকরি করত। চাকুরি ভালো না লাগায় দেড় বছর আগে ছেড়ে দেয় এবং এমটিএফই ও বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসা শুরু করে। তিনি নিজেও ছাগল বিক্রি করে ছেলের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তিনিও সিইও পদে আছেন।

তিনি আরো বলেন, তার ছেলের দোষ নেই। মানুষ রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে বিনিয়োগ করেছে। তার ছেলে সৌদি আরব হজে গেছেন।

প্রধান সিইও মিজানুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনিও হজে গেছেন। বাড়িতে তার স্ত্রী সুমি খাতুন। তবে তিনি এসব নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

থানার ওসি মো: আকিবুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে এমপিএফই সমন্ধে জানতে পেরেছেন। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ