ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।
তারা আরো বলেছে, হামাস নতুন করে দুজন আটককে মুক্তি দেয়ার পরেও তারা হামলার মাত্রা কমাবে না।
বিদ্যুৎ, ওষুধ, পানি ও কর্মী সঙ্কটের কারণে গাজায় আরো একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত ও আরো ২২২ জনকে আটক করা হয়।
এরপর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলের হামলায় অন্তত পাঁচ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যুর দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রাতে গাজায় শত শত হামলা
গাজার ৪০০-এর বেশি জায়গায় রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস ও রাফাহ এলাকায় এসব হামলায় অনেক মানুষ নিহত হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ার পর গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বহু মানুষ এই এলাকাগুলোতে এসেছে।
নিহতদের মধ্যে খান ইউনিসের উত্তর পূর্ব এলাকার শহরতলীতে একটি আবাসিক ভবনে থাকা একই পরিবারের ১৩ জন আছে। খান ইউনিসের ১২ লাখ মানুষের মধ্যে এখন চার লাখের মতো সেখানে অবস্থান করছে।
খান ইউনিসের ঘনবসতিপূর্ণ আমাল এলাকার একটি আবাসিক ভবনে হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ইসরাইলের হামলায়। এর মধ্যে ৩০৫ জন শিশু, ১৭৩ জন নারী ও ৭৮ জন বয়স্ক মানুষ।
বিবিসির এক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে লাশগুলো যখন হাসপাতালে আনা শুরু হয় তখন সেখানে ক্ষোভ ও শোকের পরিস্থিতির তৈরি হয়।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) মঙ্গলবার ভোরে জানিয়েছে, ৪০০ স্থানে তারা বিমান হামলা করেছে। এর মধ্যে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় এলাকায় হামাসের সক্রিয় টানেলও আছে।
‘হামাসের হামলা শূন্য থেকে আসেনি’
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস গাজায় মানবিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনগুলোর লঙ্ঘনের অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
উভয়পক্ষ বেসামরিক নাগরিকদের ‘মানববর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করা এবং গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বোমা বর্ষণের নিন্দা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে হামাসের হামলা শূন্য থেকে আসেনি। ফিলিস্তিনের মানুষ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির শিকার। তবে ফিলিস্তিনের দুর্গতির জন্য হামাসের হঠকারী হামলা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এবং ওই হঠকারী হামলার জন্য ফিলিস্তিনের মানুষ সার্বিকভাবে শাস্তি পেতে পারে না।’
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, মঙ্গলবারের মন্তব্যের জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের পদত্যাগ করা উচিত।
গাজায় ত্রাণবাহী আরো ট্রাক
প্যালেস্টিনিয়ান রেড ক্রিসেন্ট (পিআরসিএস) জানিয়েছে, পানি, খাবার ও ওষুধ নিয়ে আরো আটটি ট্রাক মিসরের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেয়া পোস্টে তারা জানিয়েছে, একটি ট্রাকে ওষুধ, দুটিতে খাবার ও পাঁচটি ট্রাকে করে পানি নেয়া হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি