শনিবারের হামলার পর ইরানের টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তব্যে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি বলেছেন, ‘ইসরাইলের এই ধ্বংসাত্মক হামলায় বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে যেগুলো সহজে মেরামত করা যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই বিপর্যয়ের জন্য ইহুদিবাদী শাসকদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড দায়ী।’
খামেনি হামাস যোদ্ধাদের হামলার পেছন ইরানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
তবে ইরান হামাস যোদ্ধাদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবারহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে
শনিবার হামাসের শত শত সশস্ত্র সদস্য ইসরাইল আর গাজা উপত্যকার মধ্যকার সুরক্ষিত সীমানা অঞ্চল পার করে ইসরাইলের ভেতরে প্রবেশ করে। একইসময় ইসরাইলের ভেতরে হাজার হাজার রকেট ছোঁড়া হয়।
ইসরাইলের স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত, গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী মিলে আগে থেকে এই হামলার কোনো ধারণাই পায়নি। বিষয়টিকেই অত্যাশ্চর্য মনে করা হচ্ছে।
এই সংস্থাগুলো যদি হামলার কোনো ইঙ্গিত পেয়েও থাকে, তাহলেও হয়তো তারা তার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিস্তৃত গোয়েন্দা সংস্থা। একইসাথে ওই অঞ্চলের যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নও সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ভেতরেও তাদের গোয়েন্দা আছে। এছাড়া লেবানন, সিরিয়া সহ অন্যান্য অনেক দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যেও তাদের গোয়েন্দা রয়েছে।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের গুপ্ত ঘাতকের সাহায্যে হত্যা করেছে ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসব নেতাদের কার্যক্রম আগে থেকে জেনে পদক্ষেপ নিত ইসরাইলি গোয়েন্দারা।
এসব হামলার কোনোটা ড্রোন আক্রমণের মাধ্যমে করা হয়েছে। অ্যাজেন্টরা লক্ষ্যবস্তুর গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার রেখে যাওয়ার পর নিখুঁতভাবে ড্রোনের মাধ্যমে হামলা করে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে।
আবার কখনো কখনো লক্ষ্যবস্তুর মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের মাধ্যমেও এরকম হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে।
গাজার সাথে ইসরাইলের সীমানা চিহ্নিত করা বেষ্টনীতে ক্যামেরার পাশাপাশি মোশন সেন্সরও রয়েছে যার মাধ্যমে বেড়ার আশেপাশের কোনে প্রাণির নড়াচড়া শনাক্ত করা যায়।
এছাড়া সীমান্তরক্ষীদের নিয়মিত টহল তো আছেই।
শনিবার হওয়া হামলার মত অভিযান আটকানোর জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই বেড়াগুলো।
তারপরও হামাস যোদ্ধারা যেভাবে বেড়া কেটে, সমুদ্রপথে বা প্যারাগ্লাইডারের সাহায্যে ইসরাইলের সীমানার ভেতরে প্রবেশ করেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
ইসরাইলের প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদের নাকের ডগায় থেকে হাজার হাজার রকেট জড়ো করা বা এমন সংগঠিত আক্রমণ করার জন্য নিশ্চিতভাবেই হামাস সদস্যরা ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই, ইসরাইলের মিডিয়া তাদের দেশের সেনাবাহিনী আর রাজনৈতিক নেতাদের এই প্রশ্নই করছে- কিভাবে এটা হওয়া সম্ভব হলো?
ইসরাইলের কর্মকর্তারা আমাকে জানিয়েছেন যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এই হামলার পর সবার মধ্যে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে– কিভাবে এটা সম্ভব হলো– তা হয়তো অনেক বছর ধরে মানুষের মধ্যে থাকবে।
কিন্তু এই মুহূর্তে ইসরাইলের সামনে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। তাদের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়া হামাস সদস্যদের দমন করা আর সীমান্তবর্তী এলাকার ইসরাইল অংশে হামাসের হাতে বন্দী নাগরিকদের মুক্ত করা এখন কর্তৃপক্ষের মূল চিন্তার বিষয়।
তাদের যেসব নাগরিক বন্দী রয়েছেন, তাদের মুক্ত করার জন্য হয় হামাসের সাথে আলোচনায় যেতে হবে অথবা সশস্ত্র উদ্ধার মিশনে নামতে হবে।
তবে ইসরাইলের জন্য এর চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় হামাসের সমর্থক গোষ্ঠীদের সামাল দেয়া।
হামাস এরই মধ্যে অস্ত্রের জন্য তাদের মিত্র ইরান আর লেবাননভিত্তিক শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর কাছে সহায়তা চেয়েছে।
এখন গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে পশ্চিম তীরে সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়া আর দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমানা দিয়ে সশস্ত্র হেজবুল্লাহ সৈন্যদের প্রবেশ করা ঠেকানো ইসরাইলের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সূত্র : বিবিসি