• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন

পানিবন্দি ১১ লাখ মানুষ

অনলাইন ডেক্স / ৩৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম ও বান্দরবান। তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশ বাড়িঘর। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। খাবার, পানি আর আশ্রয় সংকটে লাখো মানুষ। পাহাড়ি ঢলে মানুষের ভেসে যাওয়া ও পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। প্রায় একই পরিস্থিতি রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে। এসব জেলার কোথাও বিদ্যুৎ-পানির সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, কোথাও নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। দুর্গতদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে খোলা হয়েছে ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র। উদ্ধার কাজে নেমেছে সেনাবাহিনী।

তবে এ পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের জন্য সুসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে বৃষ্টিপাত কমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে। তবে ভরা বর্ষায় বৃষ্টি একেবারে থামবে না। আর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বুধবার থেকে আগামী তিন দিন পর্যন্ত মোটামুটি বৃষ্টির ধারা কমে যাবে। তারপর ১২ বা ১৩ আগস্ট কোথাও কোথাও একটু বৃষ্টি বাড়তে পারে। তবে কয়েকদিন ধরে দেশে যে হারে ভারি বৃষ্টি হয়েছে, সে রকম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না।

চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে আগের মতোই ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে সব মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছ থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান কালবেলাকে বলেন, দেশে আপাতত বড় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা কম। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকায় যে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তার উন্নতি হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যেতে পারে। এ জন্য তিস্তা নদীর পানি বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সাঙ্গুর নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বুধবার মধ্যরাত নাগাদ বিপৎসীমার নিচে নেমে আসতে পারে। অতি নিম্নাঞ্চলে পানি থেকে যেতে পারে। উঁচু এলাকা থেকে পানি দ্রুত নেমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমরা আশা করি। বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর কারণে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা এখনো আছে এবং উজানে কিছু কিছু স্থানে ভারি বৃষ্টিপাত লক্ষ করা যাচ্ছে। এর কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদনদীর পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। ফলে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। কোথাও মহাসড়ক, সড়ক, কাঁচা রাস্তা, আবার কোথাও কালভার্ট, ভেঙে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লন্ডভন্ড হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তবে ঘরে ফিরে নতুন শঙ্কায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ। তাদের রান্নার পরিবেশ নেই; তীব্র সংকট বিশুদ্ধ পানিরও।

৫ জেলায় পানিবন্দি ১১ লাখ মানুষ: গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদনে’ জানানো হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও ফেনী জেলায় অতিবর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতায় অন্তত ১১ লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলার ১৬২ ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়; বেশ কিছু রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় ২ লাখ ৩ হাজার ৭২টি পরিবারের ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৫০৫ জন এই দুর্যোগে পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জেলায় ৭৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৭ হাজার ৫১৩ জন মানুষ এবং ৫১৩টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। কক্সবাজার জেলায় উপদ্রুত উপজেলার সংখ্যা আটটি, পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৫০টি। এ দুর্যোগে জেলায় ২ লাখ ২০ হাজার ২৭০ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কক্সবাজারে ১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে; ২৮ হাজার ৩৭০ জন মানুষ এবং ৫৭০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ জেলায় মোট ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে সাড়ে ৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। রাঙামাটি জেলায় ৪৬টি ঘর ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরও রয়েছে। এ ছাড়া দুটি ব্রিজ-কালভার্ট এবং বিভিন্ন স্থানে পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়েছে। ঢলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগড়া উপজেলা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা, বান্দরবানের রামু উপজেলা এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির কিছু জায়গা প্রবলভাবে প্লাবিত হয়। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় আপৎকালীন দুর্যোগ মোকাবিলায় ২০০ টন করে চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছিল। আপাতত নতুন করে আর বন্যার আশঙ্কা নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বে শুক্রবার একটি প্রতিনিধিদল বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাবে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হবে। এরপর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ রাখা হবে, যেন মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও হালদা নদী খনন করা হয়।

বন্যাকবলিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক দিয়ে এখনো যানবাহন চলাচল বন্ধ। পানি নামতে শুরু করলেও চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক এখনো হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে আছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারীসহ ১৫ উপজেলা এখনো পানির নিচে। এর মধ্যে সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়নের সব গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। উপজেলাগুলোতে এ মুহূর্তে প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি।

সরেজমিন দেখা গেছে, চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজ এলাকা থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।

মহাসড়কের পাশে দোহাজারী উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়, শত শত পরিবার পানিবন্দি। এখানকার বাসিন্দারা সুপেয় পানি পাচ্ছেন না। বিশেষ করে চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর, বটতল, কসাইপাড়াসহ আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রাম কোমর থেকে গলা পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে।

যাদের ঘরবাড়ি মহাসড়কের কাছে, তাদের অনেকেই সড়কের আশপাশের দোকান এবং ভবনগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। মহাসড়ক থেকে দূরের ঘরবাড়িতে অবস্থান করা লোকজন বের হয়ে আসার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। নৌযানের অভাবে ত্রাণ নিয়ে দুর্গত গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না অনেকে।

সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে সাতকানিয়া উপজেলার সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকা চরতি, আমিলাইশ, নলুয়া ইউনিয়নের কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো। পানি ওঠার পর তারা আশপাশের এলাকায় উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিলেও গবাদি পশু সরিয়ে নিতে পারছেন না। বসতঘরের চাল ছুঁইছুঁই পানি উঠে গেলেও অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাড়িতে থেকে গেছেন।

সাতকানিয়া কেরানীহাটে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তার আশপাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব ভবনই হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে দোকানের মালপত্র। অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় সব জিনিসের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

সাতকানিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বাবর বলেন, এ মুহূর্তে সাতকানিয়া পৌর সদর এলাকা এবং আশপাশে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। সরকারি কোনো সহায়তা এসব মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।

কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে : গতকাল কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। বেড়িবাঁধ, ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন কেউ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভেসে গেছে বীজতলা, ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের।

সকালে চকরিয়া উপজেলায় পানিতে ডুবে থাকা কিছু সড়কে ভাঙনের তীব্রতা চোখে পড়ে। কাকড়া-মিনাবাজার সড়কটির তিন কিলোমিটার এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি স্থান ভেঙে গেছে। সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার ষাটোর্ধ্ব রহিম উদ্দিন জানান, চার দিন ধরে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে বন্দি ছিলেন তারা। বুধবার সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ভাঙনের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

চকরিয়ার পৌর শহরের শপিং কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পানি বের করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও রামু থেকেও নানা ক্ষতক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে।

বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল থেকে। তবে শহরে অধিকাংশ এলাকায় এখনো জমে আছে পানি।

স্থানীয়দের আশঙ্কা, আপাতত টানা বৃষ্টি বন্ধ হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টির পর বুধবার সকালে ঝলমলে রোদ দেখা গেলেও বিকেলের পর আবার শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। পাহাড় ধস ও সড়কে পানি জমে থাকায় জেলা শহরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি এবং রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় জমে আছে কাদামাটি। কোথাও কোথাও পাহাড় ধসে রাস্তায় পড়ে রয়েছে মাটির স্তূপ। শহরে অভ্যন্তরীণ সড়ক ছাড়া কোথাও যান চলাচল নেই। শহরে বালাঘাটার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় এবং বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের রামজাদি এলাকায় এখনো বুকসমান পানি রয়েছে। সেখানে নৌকায় করে পারাপার করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।

এদিকে রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন বান্দরবান শহর। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা এখনো বিচ্ছিন্ন। গতকাল বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, গোটা অফিসে কাদামাটি লেগে আছে। এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। অফিসের কর্মচারীদের কাদামাটি পরিষ্কার করে গুছিয়ে নিতে দেখা যায় সকালে।

বুধবার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখন দুর্যোগ-পরবর্তী কাজ নিয়ে আগানো হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ঢাকা থেকে একটা আউটসোর্সিং টিম এসে কাজ করবে। তাদের বলেছি, যত দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা যায় কি না। এ ছাড়া সড়কে কিছু জায়গায় এখনো পানি রয়েছে; তার পরও ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো প্লাবিত নিচু এলাকা। দীঘিনালা উপজেলায় তিন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে আছে অন্তত ৯০০ পরিবার। ক্ষতি হয়েছে ফসলের।

রাঙামাটিতে পাহাড়ি ঢলে নতুন করে আরও অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চলে নতুন করে অনেক বাড়িঘর ডুবে গেছে।

বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে বন্যাদুর্গতরা। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, সকালে অফিসে নিচতলায় পানি ডুকে পড়ায় অফিসে যেতে পারছি না। উপজেলার পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ড এবং ৮টি ইউনিয়নের ৭টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন, তাদের জন্য খাবার রান্না করে দেওয়া হচ্ছে।

বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন জানান, বন্যায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৫০ জন কেন্দ্রে অবস্থা করছেন। উপজেলায় বন্যায় ৩৫টি গ্রামে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন, তাদের তিন বেলা খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর যারা আসেননি, তাদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে চাল ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট বিতরণ শুরু হয়েছে।

টানা বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্গম উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের পথে। তাই সেই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ে।

ফেনীর মুহুরী নদীর পানি সড়কে উঠে যাওয়ায় গতকাল সকাল থেকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের ফুলগাজী বাজারের পর থেকে ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে ফুলগাজীর প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে নতুন নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে। পানি নেমে গেলেও ভোগান্তি রয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক মুছাম্মাৎ শাহীনা আক্তার জানান, ফেনীর দুই উপজেলায় ১৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে গেলে বাঁধের মেরামত কাজ শুরু করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ