আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আর নেই। বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার ছেলে মাসুদ সাঈদী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত দিয়েছেন। (‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন’)। ছেলে লিখেছেন, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীর ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী স্কলার এবং বহু গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ মহান রাব্বি কারিমের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার সফর শেষ করে আজ রাত সাড়ে ৮.৪০টার দিকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন।
হৃদযন্ত্রজনিত জটিলতা নিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রবিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন। সোমবার সকালে তার চিকিৎসায় কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে নতুন একটি ব্লক পাওয়া গেছে। তবে এই অ্যাটাকের জন্য রিং লাগবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সোমবার রাতে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে তাকে (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকে ব্যথা, হার্টে সমস্যা, প্রেশার ও ডায়াবেটিসজনিত কিছু সমস্যা ছিল। সেখানে তার ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বিএসএমইউয়ে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ওই মামলায় সাজাভোগ করছিলেন।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন সাঈদী। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৮০’র দশকের প্রথমদিকে সাঈদী দেশব্যাপী ইসলামি ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন। একই সময়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।